হুমকির ঘটনা ‘অস্বীকার’ তামিমের
‘আমি আমার ভক্ত এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাতে চাই যে, একান্তই ব্যক্তিগত কারণে এসেক্সের মৌসুম শেষ না করেই দেশে ফিরছি। কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, আমরা (পরিবার) নাকি হেট ক্রাইমের শিকার হয়েছি। এটা আসলে সত্যি নয়। ক্রিকেট খেলার জন্য ইংল্যান্ড আমাদের অন্যতম প্রিয় একটি দেশ এবং আমার আগেভাগে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত উদারভাবে গ্রহণ করেছে। আমি আমার ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই তাদের উদ্বেগ এবং বার্তার জন্য। আশা করি, ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডে আরো ম্যাচ খেলব’—এটা গতকাল তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ফেজবুক পেজের স্ট্যাটাস।
সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে নেমে বাসায় যাওয়ার পথে ইংল্যান্ড থেকে আকস্মিক দেশে ফেরার কারণ হিসেবে এ ব্যাখ্যাতেই ঘুরপাক খেয়েছেন বাঁহাতি এ তারকা ওপেনার। সঙ্গে নতুন বলতে যোগ করেছেন নিজের মনোবেদনা, ‘আমি যখন বলেছি এটা আমার ব্যক্তিগত ইস্যু, তখন আমার এ অনুরোধটাকে সম্মান দেখানো উচিত ছিল। কিন্তু সেটা হলো না। ’
ইংল্যান্ডে চলমান ‘হেট ক্রাইমে’র শিকার হয়ে এক ম্যাচ খেলেই দেশে ফেরার খবরে যে সংবাদমাধ্যম হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিমানবন্দরে, সেটি ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন তামিম। সে কারণেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি নির্গমন পথ বাদ দিয়ে তিনি গাড়িতে উঠেছেন অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের এক্সিট দিয়ে। তবে তামিমের গাড়িটা চোখ এড়ায়নি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার। তাই বিমানবন্দর থেকেই তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করেছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা। সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে এর আগে বহুবার দেশে ফিরেছেন তামিম। তবে এবারের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। ব্যর্থতা নয়, তবু সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরতে হয়েছে তাঁকে।
কী ঘটেছিল আসলে? বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবর হলো, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাইরে বেরোলে ছয়-সাতজনের একটি উগ্রপন্থী দল ঘিরে ধরে হুমকি দেয়। লক্ষ্যবস্তু, তামিমের স্ত্রীর পরিধানে থাকা হিজাব। একই খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারতের একটি দৈনিকেও। তবে ঘটনার চিত্রকল্পে ভিন্নতা রয়েছে। ঘটনার বর্ণনাকারীদেরও নামধাম প্রকাশিত হয়নি গোপনীয়তার শর্তে। একমাত্র কলকাতার সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উদ্ধৃত করা হয়েছে তামিম ইকবালের এজেন্ট রুদ্রদীপ ব্যানার্জীকে। যদিও বাংলাদেশি এ ওপেনারের এজেন্ট ইংল্যান্ডের টম হাওয়ার্ড।
তবে কি ঘটনা সর্বৈব মিথ্যা? তামিম ইকবালের ফেসবুক স্ট্যাটাস কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তেমনটাই মনে হতে পারে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী যেমন গতকাল জানিয়েছেন, ‘এ বিষয়টা নিয়ে ইসিবি (ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড) কিংবা আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগের কোনো কারণই নেই। তামিম তো নিজেই জানিয়েছে যে সে ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফিরেছে। এটা নিয়ে অন্য দেশের বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করব কেন?’ তাহলে সংবাদমাধ্যমে যে খবর এসেছে তিনি সপরিবারে আক্রান্ত হয়েছিলেন! ‘আমরা তামিমের বক্তব্য গ্রহণ করছি। মিডিয়া রিপোর্ট নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। ’
এ সরকারি ভাষ্যের ভিড়েও কিছু প্রশ্ন তো ওঠেই। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এসেক্সের হয়ে গোটা আটেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে আগস্টের ৫-৬ তারিখ দেশে ফেরার কথা ছিল তামিম ইকবালের। কিন্তু মাত্র এক ম্যাচ খেলেই হুট করে দেশে ফিরবেন কেন তিনি? এসেক্সও এমন ঘটা করে কেন ব্যক্তিগত কারণে তামিমের দেশে ফেরার খবরের পাশাপাশি তাঁর প্রাইভেসি রক্ষার অনুরোধ করবে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে তাঁর পারিবারিক মহলে এমন কোনো ‘জরুরি অবস্থা’ তৈরি হয়নি যে খেলা ফেলে ছুটে আসতে হবে। অনেক চেষ্টার পর তামিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন নাম গোপন রাখার শর্তে মুখ খুলেছেন গতকাল সন্ধ্যায়, ‘পত্রিকায় ঘটনা যেভাবে ছাপা হয়েছে, তা অতটা ভয়াবহ নয়। তবে হ্যাঁ, হুমকির ব্যাপারটি সত্যি। ’
তামিমের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাঁর ভক্তদের অনেকেরই উদ্বেগ, ‘নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছিল। ’ ভারতীয় একজন ফলোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, ‘তামিম ইকবালের উচিত এ ঘটনা প্রকাশ্যে বলা। এতে অন্য ক্রিকেটাররাও সতর্ক হবেন। ’ বাংলাদেশের একজনের উষ্মা, ‘একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটলে তো এতক্ষণে বিশ্বব্যাপী হইচই পড়ে যেত!’
এই শেষ শঙ্কাটির কারণেই কি ঘটনা আড়াল করছেন তামিম ইকবাল? সেটি সরাসরি তাঁর কাছ থেকে জানার উপায় নেই। তিনি তো ঘটনা স্বীকারই করছেন না! তবে তামিমের ওই ঘনিষ্ঠজনের ব্যাখ্যা, ‘আমি যত দূর বুঝেছি মূলত দুটি কারণে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছে না তামিম। প্রথমত, এটা নিয়ে বিস্তর হইচই হবে। দুর্দিনে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ইংল্যান্ড, সেটা ওর বিবেচনায় আছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে ঘিরে এমন ঝামেলার খবর চাউর হলে ভবিষ্যতে অন্যদের খেলার পথও বন্ধ হতে পারে। নতুন ঝামেলা কে চায়, বলেন?’
তবে প্রকাশিত খবরের পর ‘ঝামেলা’ এড়াতে দিন দুয়েক আড়ালেই থাকবেন তামিম ইকবাল। অবশ্য তাঁর ব্যাখ্যা, ‘কেবলই দেশে ফিরলাম। দিন দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে ক্যাম্পে যোগ দেব। ভালোই হলো, ফিটনেস ক্যাম্পটা ধরতে পারলাম। ’
No comments