একশ’ শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করলেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল জাতীয় সংসদে শীর্ষ একশ’ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন। সরকারদলীয় সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিকের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজে রক্ষিত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মাসভিত্তিক ঋণতথ্যের ভিত্তিতে তফসিলি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একশ’ শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকার প্রথম ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে-মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড, জেসমিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, ম্যাক্স শিপিং মিলস লিমিটেড, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঢাকা ট্রেডিং হাউস, আনোয়ার শিপিং মিলস, ইয়াসির ইন্টারপ্রাইজ, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড, এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্ট লিমিটেড এবং এলপিপিএ কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে সংসদে প্রশ্নের উত্তর দেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ প্রশ্নে : অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্থিক খাত ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান যাতে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করতে না পারে সেজন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব পাওয়া গেলে অবিলম্বে তার লেনদেন স্থগিত করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এসব কারণে বর্তমানে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে লেনেদেনের কোনো নজির পাওয়া যায়নি। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সাংসদ এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নির্দেশ অনুসারে প্রতিটি রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থায় যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার সংক্রান্ত জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে, এর বিরুদ্ধে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দিনে ৮৪৪ কোটি টাকা লেনদেন : সাংসদ এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের মে মাসের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। দৈনিক গড় লেনদেনের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৫ হাজার। তিনি আরও জানান, বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্ট সংখ্যা ৭ লাখ ৪৬ হাজার এবং সর্বমোট গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ২৬ লাখ। বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে প্রদানরত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি।
বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরশীলতা হ্রাস পেয়েছে : সরকারদলীয় আরেক সাংসদ আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদে জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
১৯৮০-৯০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় গড়ে ৫১ ভাগ বৈদেশিক সাহায্য থেকে অর্থায়ন করা হতো, যা ১৯৯১-২০০০ সাল পর্যন্ত ৪৪ ভাগ এবং ২০০১-১০ সাল পর্যন্ত ৩৭ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ২০১১-১৬ সালে এডিপির গড়ে প্রায় ৩৪ ভাগ বৈদেশিক সহায়তা থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ও প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ আবশ্যক। এছাড়াও আগামীতে বাংলাদেশকে ৭ ভাগ থেকে ৮ ভাগ বা এর অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে জিডিপির শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব থেকে এ পরিমাণ বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্য এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম।
অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পর্যাপ্ততা/ঊর্ধ্বগতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহারের গতিবিধি বিবেচনায় ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের পাশাপাশি একই ধরনের মুনাফার হার সম্বলিত ইউরো ও পাউন্ড-স্টার্লিং বন্ড প্রবর্তনের বিষয়টি যথাসময়ে বিবেচনা করা হবে।
No comments