ঝুঁকিতে ঢাকা-না’গঞ্জ রেললাইন
প্রতি বছর বৃষ্টির কারণে ডিএনডি বাঁধের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আবদ্ধ পানি সরাতে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের নিচে নালা কেটে পানি একপাশ থেকে অন্যপাশে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এ ছাড়া রেললাইনের পাশে পানি জমে থাকায় লাইনকে সুরক্ষা দিতে নির্মাণ করা দেয়াল কোনো কোনো স্থানে কাত হয়ে গেছে। কোনো স্থানে লাইনের পাশের মাটি দেবে গেছে। ফলে ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে এ রেলপথে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের ঢাকার শ্যামপুরের কুমিল্লা ডাইংয়ের পাশের অংশে রেললাইনের নিচের প্রায় এক গজ জায়গার মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখানে প্রচণ্ড বেগে ডাইংয়ের দিক থেকে বিপরীত দিকে পানি নামছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের বস্তির এক বাসিন্দা জানায়, এ ডাইংয়ের পানি যাওয়ার জন্য ডাইং মালিক রেললাইনের নিচ দিয়ে গর্ত করেছে। এ নালা দিয়ে এমনিতে বৃষ্টি ছাড়াই প্রচুর পানি নামে। আর বৃষ্টি হলে পানি রেললাইনের ওপরে উঠে আসে। কখনও কখনও রেললাইনটিই পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া কয়েক কিলোমিটার রেললাইনের দু’পাশে বস্তি গড়ে উঠেছে। এ বস্তিতে যাওয়ার জন্য রেললাইন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। ফলে বৃষ্টিতে রেললাইন ডুবে গেলে বাধ্য হয়ে এসব বস্তির কয়েক হাজার বাসিন্দাকে রেললাইনে ডাইংয়ের কেমিক্যাল মিশ্রিত কুচকুচে কালো পানিতে পা ভিজিয়ে চলাফেরা করতে হয়।
কুমিল্লা ডাইং এলাকার মতোই রেললাইনের ঢাকা ম্যাচ, ঢাকা ওয়াসা গেট, এসআর রোলিং মিল, সালাম রোলিং মিল ও চিনা মাটির মিল এলাকাসহ পাগলা-শ্যামপুরের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকার ১০ থেকে ১৫টি স্থানে একই রকমভাবে দেখা যায় রেললাইনের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে। পাগলার দক্ষিণ রসুলপুর এলাকার সালাম রি-রোলিং মিলের উল্টোদিকে দেখা যায়, রেললাইনের সুরক্ষার জন্য নির্মিত দেয়াল কিছুটা কাত হয়ে গেছে। এ এলাকায় রেললাইনের পূর্বদিকের রাস্তার ওপর পুরো বর্ষা মৌসুমেই কমবেশি পানি জমে থাকে। পাগলা রেললাইন থেকে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরে লাইনের পশ্চিম দিকে আগে রাস্তা থাকলেও বছরের বেশিরভাগই এখন সেখানে হাঁটু পানি জমে থাকে। এর প্রতিক্রিয়ায় এদিকে রেললাইনের পাশের মাটি দেবে গেছে নানা জায়গায়।
রসুলপুর এলাকাটি পড়েছে নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়নে। কুতুবপুর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবদুল কাদির জানান, প্রতি বছরই ডিএনডি এলাকার ভেতরে জলাবদ্ধতা হয়। অন্য এলাকায় জলাবদ্ধতা না হলেও দেখা যায় রসুলপুরের দিকে হয়। কারণ এদিকে পানি সরার জায়গা নেই। অন্যদিকে ডিএনডির খাল, পাগলা খাল, কংশ নদী-এগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই। এ ছাড়া শিল্প কারখানার মালিকরা তাদের বর্জ্য পানি এ নালার ভেতরেই ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে বর্ষা এলেই প্রকট জলাবদ্ধতা আর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন এ এলাকার মানুষ। আর এই জলাবদ্ধ এলাকা দিয়ে রেললাইন যাওয়ায় লাইনের নিচের মাটি নরম হয়ে বিভিন্ন জায়গায় দেবে যায়। লাইনের দেয়াল বাঁকা হয়ে যায় বা দেবে যায়। মধ্য রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লিটন হাওলাদার বলেন, ফতুল্লা থেকে জুরাইন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় রেললাইন নিচু হয়ে গেছে। কারণ রেললাইনের জায়গা দখল করে পাশে উঁচু বাড়িঘর মিল-কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে উঁচু জায়গার পানি রেললাইনের ওপরে এসে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তৈরি করে। একেকটা রি-রোলিং বা ডাইং ফ্যাক্টরি প্রতিদিন টনকে টন পানি ব্যবহার করে। এ পানি রেললাইন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিচু জায়গায় যায়।
এতে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে না নিলে অল্প দিনের মধ্যেই রেললাইনে প্রবল বিপদের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। রেললাইনের দু’পাশের জমি রেলওয়েরই। সেটি যেখানে প্রয়োজন উঁচু করা আর যেখানে প্রয়োজন লাইনের সঙ্গে মিল রেখে নিচু করে দিলে পানি লাইনের ওপরে জমবে না। এসব বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করে সরকারের উচিত রেললাইনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি পানি প্রবাহের জন্য লাইনের পাশে ড্রেন করা প্রয়োজন। যাতে এসব এলাকার পানি লাইনকে না ছুঁয়ে সরে যেতে পারে। অন্যদিকে লাইনের পাশে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা ও পানি প্রবাহের জন্য লাইনের নিচ দিয়ে নালা খোঁড়ার জন্য রেললাইনের পাশের শিল্প মালিকদের মূলত দায়ী করলেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) হামিদুল হক। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। লাইনের পাশের বিশেষ করে পাগলা শ্যামপুর এলাকায় শিল্প মালিকরা তাদের বর্জ্য পানি লাইনের নিচ দিয়ে বা পাশে রেলের জায়গা দিয়ে নিষ্কাশন করতে গিয়ে এ কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তৈরি করছেন। তাদের এ বর্জ্য পানিতে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা রেললাইনের লোহার সঙ্গে বিক্রিয়া করে লোহাকে দ্রুত নষ্ট করে। আমরা এদের নোটিস দিয়েছি, এদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছি। কিন্তু তাদের থামাতে পারিনি।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
No comments