Header Ads

Surfe.be - Banner advertising service
  • Breaking News

    শুল্ক কমলেও চালের বাজারে প্রভাব নেই


    চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। গত এক সপ্তাহে ভারত থেকে প্রায় ৭০ হাজার টন চাল এসেছে। শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কেজিতে ৬ টাকা দাম কমবে চালের। কিন্তু কম শুল্কের আমদানিকৃত চাল দেশের বাজারে এলেও এখনও স্বস্তি মেলেনি ভোক্তার। কারণ রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ খুচরা বাজারে এখনও সব ধরনের চালই বিক্রি হচ্ছে আগের মতো চড়া দামে। তবে দিনাজপুরসহ কয়েকটি এলাকার পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কিছুটা কমে এসেছে। আবার ব্যবসায়ীরা বলছে, বাংলাদেশে চালের সঙ্কট ও আমদানি শুল্ক কমানোর খবর জানার পর ভারত সরকার চালের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চাল আমদানিকারকরা জানান, বাংলাদেশে ঘাটতির সুযোগ নিয়ে চালের দাম টনপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত ও মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল মিলছে না বাজারে। এ ছাড়াও ভারত থেকে আসা চালের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ব্যবসায়ীরা। 

    আমদানিকৃত চাল এলেও ভোক্তারা সুফল না পাওয়ার বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের বাজারে এখন চাল নিয়ে নানা রকম খেলা চলছে। চাল সঙ্কটের পেছনে প্রধান কারিগর মিলমালিকরা। তাদের কাছে পর্যাপ্ত ধান-চাল থাকার পরও সিন্ডিকেট করে তারা কম চাল ছাড়ছে বাজারে। তারপর সঙ্কটের পেছনে দায় রয়েছে সরকারের। কেননা চালের মজুদ ও সংগ্রহ নিয়ে সরকারের নীতিতে ভুল ছিল, সরকারের গুদামে চালের মজুদ কেন এত কমে গেল, আমি জানি না। উচিত ছিল সরকারের আগে থেকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। তিনি বলেন, সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে, ভালো কথা। কম শুল্কের চালও এসেছে দেশে। কিন্তু ক্রেতারা তো এখনও এর সুফল পায়নি। আমি মনে করি এখানেও সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। কম দামের চাল আসার পরও কেন দাম কমল না এখনই সেটি তদারকি করে দেখা দরকার সরকারের। কারণ ব্যবসায়ীরা এখানেও বাড়তি মুনাফা লুফে নিচ্ছে। 

    রাজধানীর প্রধান পাইকারি চালের বাজার বাবুবাজারের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে প্রচুর চাল দেশে আসছে। শুল্ক কমানোয় আমদানিকারকরা চাল আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। আর সরু চালের দাম কমেছে ১০০ টাকার মতো। গতকাল বাদামতলী-বাবুবাজার চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮, পারিজা) ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এই চাল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আর সরু চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়। ঈদের আগে এই চাল ৫১ থেকে ৫৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গতকাল এই দুই বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর সরু চালের কেজি ৫৭ থেকে ৬০ টাকা। 

    এ তো গেল পাইকারি বাজারের চিত্র। এবার নজর দেওয়া যাক খুচরা বাজারের দিকে। গতকাল খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশের খুচরা বাজারেই মোটা-চিকন সব ধরনের চালই বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই চড়া দামে। খুচরা বাজারে এখনও মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা, পারিজা ৪৬ টাকা, মিনিকেট (ভালো মানের) ৬০-৬২ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৭-৫৮ টাকা, বিআর২৮ ৫০-৫২ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫৪-৫৬ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৬০-৬২ টাকা, পাইজাম ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

    রাজধানীর কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম বলেন, খুচরা বাজারে এখনও চালের দাম না কমার পেছনে প্রধান কারণ আমদানিকৃত চাল এখনও আমাদের কাছে বেশি এসে পৌঁছায়নি। অল্প কিছু এলেও চালের মান ভালো না হওয়ায় এলসির চালে ক্রেতার আগ্রহ কম। মূলত এ কারণেই খুচরা বাজারে চালের দাম এখনও কমেনি। একই বাজারের আরেক খুচরা চাল বিক্রেতা কামরুল ইসলাম জানালেন আরেক কারণ। তিনি বলেন, আমদানি করা হচ্ছে মোটা চাল। তাই হয়তো পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু এর ফলে চিকন চালের বাজারে কোনো প্রভাব নেই। তবে আমরা আশা করছি কম শুল্কের আমদানিকৃত চাল ব্যাপক হারে আমাদের কাছে এলে হয়তো খুচরা বাজারেও কমবে চালের দাম। 

    রফতানি শুল্ক বাড়িয়েছে ভারত : বাংলাদেশের বাজারে চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত সরকার চালের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের চাল আমদানিকারকদের অভিযোগ, বাংলাদেশে ঘাটতির সুযোগ নিয়ে চালের দাম টনপ্রতি ৩৫-৪০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ফলে আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল মিলছে না বাজারে। আমদানিকারকরা জানান, যে চাল কিছুদিন আগে প্রতি টন ৩৯০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হতো সেই একই চাল এখন ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০ মার্কিন ডলারে। হিলির আমদানিকারক হারুনুর রশীদের অভিযোগ, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে আমরা চাল আমদানি করে সুফল পাচ্ছি না। 

    এদিকে সংবাদ প্রতিদিনের জেলা ও বিভাগীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, জেলা পর্যায়েও পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরাতে এখনও কমেনি। 

    চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গত ৩-৪ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে ২-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে জানিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে দুই ধরনের মোটা চালের কাটতি রয়েছে। এর মধ্যে ইরি আতপ চাল ৩৮-৪০ টাকা, ইরি সিদ্ধ চাল ৪৬-৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত ৪ দিন আগে যথাক্রমে ৪২ ও ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মোটা চালের মধ্যে বেতি চাল ৪৬ টাকা থেকে কমে ৪৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তারা। তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও অনেক খুচরা দোকানি দাম কমার কথা অস্বীকার করে আগের দামে চাল বিক্রি করছে। 

    খুলনা ব্যুরো জানায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনার পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে। মহানগরীর বড় বাজারের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মোটা স্বর্ণা চাল কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমেছে। বালাম ৪৯ টাকার স্থলে ৪৭ টাকা, হিরা মোটা ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৩৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৫৩ টাকা থেকে কমে ৫১ টাকা, লোকাল ভাটেল ৫৫ টাকার স্থলে ৫১ টাকা, চিনি আতপ ৪০ টাকার স্থলে ৩৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। 
    রংপুর প্রতিনিধি জানান, শহরের সিটি বাজার, কামালকাছনা বাজার, সিগারেট কোম্পানি বাজার ও মাহিগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় বর্তমানে মোটা চালের দাম কিছুটা কম। এর মধ্যে হাইব্রিড চালের বস্তা (৫০ কেজি) এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৭০০ টাকা বর্তমানে ১৬০০ টাকা। বিআর১১ চালের দাম ছিল ২১৫০ টাকা বর্তমানে ১৯৫০ টাকা। গুটি স্বর্ণার দাম ছিল ২২০০ টাকা বর্তমানে ২১০০ টাকা। 

    সিলেট ব্যুরো জানায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেটের পাইকারি চালের বাজারে মোটা চালের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা করে। তবে খুচরা বাজারে এখনও দাম চড়া। সিলেটের পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহে মোটা হিরা চাল বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় আর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। এ ছাড়া আটাইশ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় আর বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, এলসি ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বর্তমানে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়। সিলেট চাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেটে সব ধরনের চালের দাম কমেছে। 

    রাজশাহী অফিস জানায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজশাহীর পাইকারি বাজারে মোটা গুটি স্বর্ণা জাতের চাল কেজিতে ৮ টাকা কমলেও অন্যান্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকার এপি চাল ভাণ্ডারের মালিক প্রকাশ প্রসাদ জানান, এক সপ্তাহ আগে গুটি স্বর্ণা চালের কেজি ছিল ৫০ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা। এ ছাড়া অন্য আর কোনো চালের দাম কমেনি।

    No comments

    Post Top Ad

    Surfe.be - Banner advertising service

    Post Bottom Ad