বনানীতে তরুণী ধর্ষণ: রিমান্ডে ইভান দায় স্বীকার
রাজধানীর বনানীতে তরুণী অভিনেত্রীকে ধর্ষণের মামলায় বাহাউদ্দিন ইভানকে (২৮) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড পেয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুর ২টায় ইভানকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই সুলতানা কামাল। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলামের আদালত ইভানকে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইভান ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র্যাব-১ ও ১১ যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় খালার বাড়ি থেকে ইভানকে গ্রেফতার করা হয়।
মুফতি মাহমুদ বলেন, ৫ জুলাই পুলিশ যখন বনানীর বাসায় তল্লাশি চালায়, সে সময় ছাদে আত্মগোপনে ছিল ইভান। পুলিশ চলে যাওয়ার পর বাসা থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যায় ইভান। এরপর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় আবার আত্মগোপন করে। সর্বশেষ সে ঢাকা থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জে গেলে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। ইভানকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ইভান জানায়, তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। সে (ইভান) নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। এরপর পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। তখন থেকেই সে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করত। তবে ‘বিভিন্ন অপকর্মের’ কারণে ২০০৮ সালে অল্প বয়সে তাকে পরিবার থেকে বিয়ে করানো হয়। তার পাঁচ বছর ও দেড় বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী বর্তমানে লালবাগে বাবার বাড়িতে থাকছেন। ২০০৫ সাল থেকে ইভান মাদক সেবন করে। আর দু’বার মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে চিকিত্সাধীন ছিল সে।
গত বুধবার ইভানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন এক তরুণী অভিনেত্রী (২১)। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই তরুণীর ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন চিকিত্সক সোহেল মাহমুদ।
বাবার পা ধরে মাফ চাইল ইভান : বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামি বাহাউদ্দিন ইভানকে যখন আদালতের কাঠগড়ায় রাখা হয়, তখন তার বাবা বোরহান উদ্দিনও এজলাস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। বাবাকে দেখেই কেঁদে দেয় ইভান। একপর্যায়ে তার বাবাও কেঁদে ফেলেন। এ সময় বাবার পা জড়িয়ে মাফ চায়। বাবার পা ধরে ইভান বলতে থাকে, বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি এ কাজ (ধর্ষণ) করি নাই। ওই মেয়েটি বিবাহিত। ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। উত্তরে বাবা বলেন, আমি জানি তুমি এ কাজ করোনি। যদি অপরাধ করে থাকো তাহলে শাস্তি পাবে। না করে থাকলে আল্লাহ তোমাকে বাঁচাবে। এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করো।
ইভানের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাকে নিয়ে টানাটানি করতে থাকে। তাই নিজেকে বাঁচাতে ছেলেকে র্যাবের হাতে ধরিয়েছি। ছেলে অপরাধী হলে শাস্তি পাবে, না হলে খালাস পাবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন মার্কেটে আমার দোকান আছে। অথচ গণমাধ্যমে আমাকে কোটিপতি বানিয়ে দিয়েছে। আমার ছেলে বিবাহিত। তার দুটো বাচ্চা আছে। তার সুন্দরী স্ত্রীও আছে। সে কেন এ কাজ (ধর্ষণ) করতে যাবে। অন্যদিকে ইভানের স্ত্রীর দাবি, আমার স্বামী ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে ইভানকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই সুলতানা কামাল। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় ইভানের বাবা-মা ও স্ত্রী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
No comments