ছয় সিটির নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠেয় ছয় সিটি করপোরেশনের (গাজীপুর, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর) নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। এর আগেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছে দলটি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দ্রুতই দেবে বিএনপি। এর আগে যেসব প্রার্থী মেয়র নির্বাচন করেছেন তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে তিনজন এবারও মনোনয়ন পাবেন। বাকিগুলোতে নানা বিবেচনায় প্রার্থী বদল হতে পারে। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যাঁরা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেননি—এমন প্রার্থীরাই মনোনয়ন পাবেন।
সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক বছরখানেক আগে এই নির্বাচনগুলোকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বিএনপি। দল মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলে সরকারের জনপ্রিয়তায় ছেদ পড়েছে বলে প্রচার করা যাবে। আবার হেরে গেলে কারচুপির অভিযোগ তুলে সংসদ নির্বাচনে সহায়ক সরকারসহ নানা দাবি আদায়ের সুযোগ মিলবে। যেমনটি তারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের জুন-জুলাইয়ে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে করেছিল। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও ভেতরে ভেতরে কাজ করছে বলে বিএনপি নেতারা জানান।
এবার কারা প্রার্থী হচ্ছেন জানতে চাইলে বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিগত সময়ে দলের মনোনয়নে যাঁরা মেয়র হয়েছেন, কিন্তু দলের পক্ষে কাজ করেননি তাঁরা কোনোভাবেই এবার প্রার্থী হতে পারবেন না। যাঁরা কাজ করতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েও দলের প্রতি অনুগত থেকেছেন তাঁরাই প্রার্থী হবেন। সিলেটে আরিফুল হক, গাজীপুরে এম এ মান্নান, বরিশালে আহসান হাবীব কামাল, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনায় মনিরুজ্জামান মনির প্রার্থী ছিলেন। তাঁরা জয়ী হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দুইবার, মনিরুজ্জামান মনির একবার, আরিফুল হক চৌধুরী দুইবার, অধ্যাপক এম এ মান্নান তিনবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় আহসান হাবিব কামাল একবারও বরখাস্ত হননি। তবে আরেকটি সূত্র বলছে, তিনি একবার বরখাস্ত হয়েছিলেন। রংপুরে এবার প্রার্থী হতে চান রংপুর বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল, গাজীপুর ও রংপুরের প্রার্থী বিষয়ে তাঁরা নতুন করে চিন্তা করবেন। বাকি তিন সিটিতে বর্তমান মেয়ররাই মনোনয়ন পেতে পারেন। বারবার বরখাস্ত হওয়ায়, স্থানীয় জনগণের সহানুভূতি থাকায় এবং আন্দোলনে সাধ্যমতো ভূমিকা রাখায় আপাতত তাঁরা ডেঞ্জার জোনের বাইরে। তবে বিগত আন্দোলনে ঢাকা ও গাজীপুরের নেতাদের প্রত্যাশিত ভূমিকা না থাকায় হাইকমান্ড নাখোশ।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘কারা মেয়র পদে মনোনয়ন পাবেন সে বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে খোঁজখবর রাখছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। যোগ্যতার বিচারে কারা এগিয়ে তাঁরা তা জানেন। তদবির করে এবার মনোনয়ন মিলবে না, তা নেত্রী পরিষ্কার করেছেন। এ ছাড়া সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনের ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেব। জুলুম-হামলা-মামলার পরও আমরা মাঠে থাকব, যাতে ফল ঘরে তোলা যায়। আর বিতর্কিতদের প্রার্থী করে তৃণমূলের বিরাগভাজন হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
No comments