Header Ads

Surfe.be - Banner advertising service
  • Breaking News

    জরায়ু ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিকার

    Daily-sangbad-pratidin-joraiyu-cancer

    শুধু স্তন ক্যান্সার নয়, গোটা বিশ্বে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। যে কোনো বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। তবে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের নারীরা এ রোগের শিকার হন বেশি। আবার ৫০ বছর বয়স্ক কিংবা এর থেকে বেশি বয়সের নারীরাও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
    গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর পৃথিবীতে শুধু জরায়ু ক্যান্সারেই আক্রান্ত হয় ২ লাখ ৫০ হাজার নারী। যদি আক্রান্ত নারীরা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করান তাহলে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫০% কমে যায়। আর প্রথম থেকেই চিকিৎসা করালে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ৯৫%।
    জরায়ু ক্যান্সারকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা হয়। কারণ এই অসুখ দেখা দিলে অনেক নারীই এর লক্ষণ বুঝতে পারেন না। আবার ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলেও অনেক সময় গুরুত্ব দেন না।
    কাজেই সুস্থ থাকতে জেনে নিন জরায়ু মুখ ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ ও তার প্রতিকার:
    জরায়ু ক্যান্সারের কারণ
    বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কম বয়সে সহবাস, কম বয়সে ঘন ঘন সন্তান ধারণসহ বহুগামীতা, ধূমপান, দারিদ্র্য, এইচপিভি সংক্রামণ, এইচএসভি-২ সংক্রামণ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহার, নিরাপদ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কারণে জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
    লক্ষণ
    – নিন্মাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা কিংবা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা
    – গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য। হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা, পেটে অস্বস্তি লাগা ইত্যাদি পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
    – অন্য সময়ের থেকে পেটে অনেক পরিবর্তন দেখা দেওয়া।
    – পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা।
    – বমি বমি ভাব কিংবা বার বার বমি হওয়া।
    – ক্ষুধা কমে যাওয়া।
    – অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা ওজন অনেক বেশি কমে যাওয়া।
    – যৌনমিলনের সময় ব্যথা পাওয়া।
    – অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা।
    – নারীদের মেনোপজ হওয়ার পরেও ব্লিডিং হওয়া।

    জরায়ুর ক্যান্সারের উপসর্গ:
    ১) দুই মাসিক এর অন্তর্বর্তী সময়ে হালকা রক্তপাত হওয়া,
    ২) মাসিকের সময় রক্তপাতের পরিমান স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী হওয়া,
    ৩) সহবাসের পরে রক্তপাত হওয়া,
    ৪) সহবাসের পরে ব্যথা অনুভূত হওয়া
    ৫) মাসিক বন্ধ হবার পরও মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হওয়া।
    প্রতিরোধ:
    সহবাসের সময় কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য দায়ী (HPV) এর অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন বা টীকা পাওয়া যায়। এটা পুরপুরি নিরাপদ এবং শতভাগ কার্যকর। এই ভ্যাক্সিন ১১ বছর বয়স থেকে শুরু করে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত দেয়া সম্ভব। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এই vaccination প্রোগ্রাম শুরু হলেও এখনো এর ততটা ব্যাপ্তি ঘটেনি।
    রোগ নির্ণয় বা screening:
    জরায়ুর মুখে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের screening tests রয়েছে।যেমন Pap smear ও VIA টেস্ট।এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার VIA পরীক্ষাটকেই সর্বসাধারণের জন্য sceening test হিসাবে নির্ধারণ করেছে। এর কারন হচ্ছে VIA test অতি সহজেই ও স্বল্পমূল্যে করা সম্ভব। সকল সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করানোর সুযোগ রয়েছে।
    চিকিৎসা:
    Cervical cancer চিকিৎসার কিছু রকমভেদ রয়েছে। যাদের এখনও ক্যান্সার হয় নি অর্থাৎ pre-cancer stage এ আছেন ,তাদের চিকিৎসা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে local anaesthesia (স্থানিক অবশ)-এর মাধ্যমে করা হয়।এতে নিরাময়ের হার ৮০-৯৬%। আর যাদের শরীরে এই ক্যান্সার পুরোপুরি বাসা বেঁধে ফেলেছে তাদের জন্য ক্যান্সারের ধাপ অনুযায়ী সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মত বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও ৮০ শতাংশ ক্যান্সারের রোগী এমন সময় আসে যখন আর অপারেশন করে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। অথচ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই একে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
    প্রতিকার
    যদিও সকল রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সম্ভব হয়না, তবে জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব। কারণ ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মী সহজেই জরায়ু মুখ দেখতে এবং পরীক্ষা করতে পারেন। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে জরায়ু মুখে অনেক দিন ধরে একটি ক্যান্সার পূর্ব অবস্থা বুঝা যায় কিংবা ভবিষ্যতে ক্যান্সারের আশংকা আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়। আর এ অবস্থা ধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না; বরং চিকিৎসার পরও সন্তান ধারণ সম্ভব।
    জরায়ু মুখের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মরিয়ম ফারুকী বলেন, জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত নারীদের বছরে একবার করে পরীক্ষা করা উচিত। তবে পর পর দুইবার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে ৩ অথবা ৫ বছর পরপর পুনরায় পরীক্ষা করাবেন। ঝুঁকিপূর্ণ নারীরা ৩ বছর পর পর পরীক্ষা করাবেন।
    এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশেও জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই এই টিকাও রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
    মূলত ভয়, সামাজিক কুসংস্কার, পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব, অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের সুবিধা না থাকায় ক্যান্সার দেরিতে ধরা পড়ে। কাজেই আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হোন; সুস্থ থাকুন।

    No comments

    Post Top Ad

    Surfe.be - Banner advertising service

    Post Bottom Ad