Header Ads

Surfe.be - Banner advertising service
  • Breaking News

    এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে গুলি করার হুমকি সিকদার গ্রুপের

    ‘গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব’
    সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই দিপু হক সিকদার
    অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঋণ দিতে এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে চাপ বিদেশি নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে নির্যাতনের হুমকিসিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা। পুলিশ বলছে দুই ভাই পলাতক।
    তোর কত বড় সাহস যে আমার কথা অমান্য করিস। গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব।’ বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়াকে অস্ত্রের মুখে ধরে এনে এভাবেই হুমকি দিয়েছেন সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার।

    শুধু তা–ই নয়, ব্যাংকটির এমডি ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টাও করেন তাঁরা। চালানো হয় নির্যাতন। জোর করে সাদা কাগজে সইও নেওয়া হয়।

    আর ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউসে গত ৭ মে। মূলত এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়ে সময়মতো না পাওয়াতেই চলে এ নির্যাতন। এ ঘটনার পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

    উপস্থিত ছিলেন আরেক এমডি
    মূলত ৫০০ কোটি টাকা ঋণের জন্য বন্ধকি দেওয়া সম্পত্তি দেখাতে নিয়ে গিয়েই জিম্মি করা হয় এই দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে। এরপর বনানীর বাসায় ধরে আনা হয়। দুপুর ১২ টায় জিম্মি হওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান শীর্ষ পর্যায়ের এই দুই ব্যাংক কর্মকর্তা। এ সময় সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

    গুলশান থানায় এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় এসব অভিযোগ করা হয়েছে। ব্যাংকটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা মিলেছে। তবে ব্যাংকটির কেউ এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

    যাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তাঁরা হলেন সিকদার গ্রুপের মালিক জয়নুল হক সিকদারের ছেলে এবং গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই দিপু হক সিকদার।

    মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাদীর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা নেওয়া হয়েছে। এই মামলার দুই আসামি পলাতক। তাঁদের পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে।

    প্রকল্প দেখাতে নিয়ে গুলি
    মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ আগে এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে আবেদন করে সিকদার গ্রুপ। এ জন্য ৭ মে বেলা ১১টায় এক্সিম ব্যাংকের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে আসেন রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ। তাঁরা ব্যাংকটির এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রূপগঞ্জের আদি নওয়াব আসকারি জুট মিল পরিদর্শনে নিয়ে যান। পরিদর্শনে গিয়ে জামানত হিসেবে ওই সম্পত্তির বন্ধকি মূল্য নথিপত্রে দেখানো মূল্যের চেয়ে কম উল্লেখ করেন ব্যাংকটির এমডি ও অতিরিক্ত এমডি। এরপর রন হক সিকদার তাঁদের পূর্বাচলের ‘আইকন টাওয়ার’ পরিদর্শনে যেতে বলেন। কিন্তু টাওয়ার পরিদর্শনে গিয়ে রন হক সিকদার ও চৌধুরী মোসতাক আহমেদকে না পেয়ে এবং প্রকল্পের ভেতরের সড়ক অপরিচিত হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি ৩০০ ফিট সড়ক ধরে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেন।

    ওই সড়কে রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিকে দেখতে পান তাঁরা। ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে বলেন, ‘রন হক সাহেবের বলে দেওয়া নির্ধারিত স্থানে আপনারা উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন বিধায় উনি অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ন ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’ এরপর রন হক সিকদারের নিকট এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে মাফ চাইতে বাধ্য করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই রন হক সিকদার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডির উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন। তবে তা এমডির বাম কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর আবারও তাঁকে গুলি করতে উদ্যত হলে এক্সিম ব্যাংকের এমডি গাড়ির পেছনে আশ্রয় নেন।

    এরপর এক্সিম ব্যাংকের এমডির গাড়িতে ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে তোলা হয়। তারপর গাড়িতে রন হক সিকদারের একজন নিরাপত্তাকর্মীকে তোলা হয়। তিনি এমডি ও অতিরিক্ত এমডির মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁদের বনানীর সিকদার হাউসে নিয়ে যান।

    নির্যাতন ও সাদা কাগজে সই
    মামলার নথি অনুযায়ী, তাঁদের সিকদার হাউসের ৩য় তলায় নেওয়ার পর রন হক সিকদার ব্যাংকটির এমডির উদ্দেশে বলেন, ‘তোর কত বড় সাহস যে আমার কথা অমান্য করিস। গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব।’ সেখানে তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঋণ দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।

    আর ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে নিয়ে যাওয়া হয় ৬ষ্ঠ তলায়। সেখানে রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার মদ পান করছিলেন। অতিরিক্ত এমডির উদ্দেশে রন হক সিকদার বলেন, ‘প্রতি কাঠা জমির দাম আড়াই কোটি টাকা, আর তুই কেন বললি প্রতি বিঘার দাম আড়াই কোটি টাকা। এখনই তোকে শেষ করে ফেলব।’ এ সময় দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে।

    এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে নিয়ে তাঁর সঙ্গে ছবি তোলা হয়। এরপর দুই গাড়িচালকসহ রাত সাড়ে ৭টায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রন হক সিকদার বাসার নিচে এসে সবার মোবাইল ফোন ফেরত দেন।

    উল্লেখ ব্যাংক, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, নির্মাণ, এভিয়েসনসহ বিভিন্ন খাতে সিকদার গ্রুপের বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বাইরে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সিকদার গ্রুপের ব্যবসা রয়েছে বলে গ্রুপটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। জয়নুল হক সিকদারের ছেলেরা ব্যবসায় যুক্ত, আর মেয়ে পারভিন হক সিকদার সংরক্ষিত আসনের সাংসদ।

    আতঙ্কিত ব্যাংকাররা
    বিষয়টি নিয়ে একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে এমন নির্যাতনের ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েছেন তাঁরা। কেউ প্রকাশ্যে বা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি। তবে তাঁরা বলেছেন, ব্যাংকের ঋণ কীভাবে দেওয়া হয় আর কেন আদায় হয় না, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে। একজন এমডি বলেন, এভাবে নির্যাতিত হলে ব্যাংকগুলো কীভাবে চলবে। এর যথাযথ বিচার না হলে কেউ নিরাপদ নন। একাধিক এমডি বলেছেন, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এমন নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের প্রকাশ্য ভূমিকা প্রয়োজন। নইলে কেউ কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না।

    No comments

    Post Top Ad

    Surfe.be - Banner advertising service

    Post Bottom Ad