ক্রিকেটাররাই কেন বারবার? মুক্তির পথই বা কী?
মাঠ ছেড়ে কোর্ট-কাছারিতে ঘুরতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। |
সাবেক সচিব ও ক্রিকেট অনুরাগী আখতার হোসেন খানের দৃষ্টিতে পুরো বিষয়টিই ‘সংস্কৃতিগত ঘাটতি’। তাঁর মতে, ‘সব ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কিন্তু এমন অভিযোগ নেই। দু-একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে এবং অভিযোগগুলো রীতিমতো গুরুতর। নারীঘটিত ব্যাপার থেকে শুরু করে গৃহপরিচারিকাকে শারীরিক নির্যাতন; এমনকি নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে অত্যাচারের মতো নোংরা অভিযোগ উঠছে। ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক। আমার মনে হয়, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষার অভাবেই এমনটি হচ্ছে। ক্রিকেট থেকে প্রচুর আয়ও অনেকের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। নিজের আয় সঠিক পথে ব্যবহার করতে না জানার কারণেই কয়েকজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে গুরুতর সব অভিযোগ উঠছে। অথচ আমাদের দেশেই অনেক তারকা ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা প্রচুর আয়রোজগার করেন, যাঁরা নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন।’
আখতার হোসেন খান এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বলিষ্ঠ পদক্ষেপ আশা করেন, ‘ক্রিকেট যে কেবল একটা খেলা নয়, পরিপূর্ণ একটা সংস্কৃতি—বিসিবির উচিত এটিই খেলোয়াড়দের বোঝানো। কঠোর তারা হতেই পারে, কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই তো ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অভিরুচির ব্যাপার, সেখানে ক্রিকেটারদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করাটাই বিসিবির পদক্ষেপ হওয়া উচিত।’
আখতার হোসেন খানের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম। ক্রিকেট একাডেমিকে কেবল ক্রিকেটচর্চার কেন্দ্রবিন্দু করে রাখার বিরোধী তিনি, ‘ক্রিকেট একাডেমিতে একজন ক্রিকেটার কেবল ক্রিকেট শিখবে না, সামাজিক আচার-আচরণও শিখবে। কীভাবে কথা বলতে হয়, জনসমক্ষে তাঁর আচার-আচরণ কেমন হবে, সেটা শেখানো খুব জরুরি।’
আমিনুল নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতি টেনে বলেন, ‘আমাদের সময় যে দলে একটু লাগামহীন প্রকৃতির খেলোয়াড় ছিল না, তা দাবি করব না। আমাদের সময়ও ছিল। অনেকেই সিগারেট খেত। কিন্তু আমি তাদের কাউকেই প্রকাশ্যে সিগারেট খেতে দেখিনি। এগুলোই সচেতনতা। এটাই শিখতে হবে তরুণ ক্রিকেটারদের। জাতীয় ক্রিকেট দলে একবার খেলা মানে সবার মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসা। শিশু-কিশোরদের হিরো হয়ে যাওয়া। তখন তাকে আচার-আচরণে অনেক সচেতন হতে হবে।’
বিসিবির পরিচালক ও আরেক সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ভেবে পাচ্ছেন না কিছু ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কেন এত অভিযোগ উঠছে, ‘ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেরই অনেক ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু এগুলো প্রকাশ্যে আসবে কেন? তারা যেন এ ধরনের আচরণের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে, ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে বারবার বোঝানো হয়, আলাদা নীতিমালাও আছে। কিন্তু সেই নীতিমালা অনুসরণ না করাটা একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত শিক্ষা-দীক্ষা ও পারিবারিক সংস্কৃতির সমস্যা।’
আকরাম কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরেই বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তিনজন জেলও খেটেছে। একজন ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে নিয়ে আসার পেছনে বিসিবির বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগ থাকে। উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য যখন একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে, তখন কিন্তু বিসিবির বিনিয়োগটিই হুমকির মুখে পড়ে। এটা বিরাট ক্ষতি। বোর্ড এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর। ক্রিকেট যে একটা সংস্কৃতি, সেটা খেলোয়াড়দের মাথায় দেওয়ার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, ভবিষ্যতে এমন আর হবে না। যদি হয়, সেটি আমাদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।’
যে ক্রিকেটারদের বীরের আসনে বসায় ক্রিকেটপ্রেমীরা, তাঁদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অভিযোগই তাদের ব্যথিত করে। একজন ক্রিকেটারের ব্যাপারে অনুসারীদের একধরনের মোহভঙ্গ ঘটে। এ বিষয়টি তারকা ক্রিকেটারদের বুঝতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। তারকা হওয়ার চেয়ে তারকাখ্যাতি ধরে রাখাটাই যে বেশি কঠিন।
No comments