ভ্যাট আইন স্থগিত করায় রাজস্ব আদায়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে, বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভ্যাট স্থগিত করায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে।’ বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা এসব কথা জানান।
|
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। |
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভ্যাট আইন স্থগিত করা হয়েছে। এতে কিন্তু ক্ষতি হয়েছে। এখন সেটা আমাদের যেভাবে হোক ব্যবস্থা করতে হবে। হয় ব্যাংকের লোন নিতে হবে, নয় তো আমাদের উন্নয়ন বাজেট কাটছাট করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট আইন স্থগিত করা হয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন, এতে রাজস্ব ক্ষতি হবে না। ক্ষতি কিন্তু হয়েছে। কারণ ভ্যাট ধরে আর মোবাইল ফোন থেকে কী আয় হবে সেটা ধরেই কিন্তু বাজেট করা হয়েছে। তবে আমরা দেখবো কোথায় কীভাবে এটা অ্যাডজাস্ট করা যায়।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই যদি আয়কর দেন, তাহলে সেটা দেশের উন্নয়নের কাজে লাগবে। ওই রাস্তাঘাট তৈরি হবে, মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারবো, ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারবো। সব দিক থেকে কিন্তু মানুষ উপকৃত হবে। কাজেই সামান্য একটু ট্যাক্স দিলেই মানুষ অনেকগুলো সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বাজেটের ঘাটতিও পূরণ হবে। দেশটারও উন্নতি হবে।’
বাজেট নিয়ে সংসদ সস্যদের সমালোচনার প্রসঙ্গ তুলে সংসদ নেতা বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা যে নিজেদের মতামত দিতে পারে, তার প্রমাণ এই সংসদ। তারা স্বাধীনভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা রয়েছে তা প্রমাণিত সত্য। সরকার দলের সদস্যরাই সব থেকে বেশি অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। সরকারের সমালোচনা করেছেন। তাদের সমালোচনায় অর্থমন্ত্রী বাজেটে বেশকিছু সংশোধনী এনেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। মন্দা সত্ত্বেও আমরা প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পেরেছি। অর্থনীতিকে গতিশীল করেছি। বাজেট বৃদ্ধি করেছি। এত বড় বাজেট কোনদিনও দেওয়া হয়নি। আমরা তেল মাথায় তেল নয়, উন্নয়ন যেন হতদরিদ্রদের মাঝে পৌঁছে সেইভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। এজন্য আজ বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে বিস্ময়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে এক লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছি। অথচ অনেক পত্রিকায় উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয় হয়নি বলে শতাংশ হিসেব করে বড় বড় হেডলাইন করেছেন। তারা হয়তো দেখেনি কত কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট ছিলো আর কত কোটি টাকা বাস্তবায়ন হয়েছে। এবারও আমরা উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা রেখেছি। আরা ইনশাল্লাহ এটা পূরণ করতে পারবো। এতে আমাদের উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে।’
খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট সক্রিয় রয়েছে। কোথাও ভেজাল প্রমাণ হলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তির বিধান করা হচ্ছে, এটা চলমান রয়েছে। ফরমালিন বন্ধের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আগের মতো এখন ফরমালিন ব্যবহার হয় না। আপনারা নিশ্চিন্তে আম খেতে পারেন। ভেজাল খাই আর যা খাই আমাদের আয়ুষ্কাল কিন্তু বেড়ে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছি বলেই আয়ুষ্কাল বেড়েছে।’
লবণ আমদানি প্রসঙ্গে রওশন এরশাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় লবণের উৎপাদন কম হয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদ রয়েছে। এটাকে মাথায় রেখে লবণ আমদানি করা হয়েছে। যাতে কোরবানির সময় চামড়া সংরক্ষণে কোনও সমস্যা না হয়।’
বৃষ্টিতে রাজধানীতে পানি জমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডিতে এক সময় ধান হতো, সেখানে বিল ছিলো। বিল ভরাট করে বসুন্ধরা সিটি করা হয়েছে। মতিঝিল নাম আছে কিন্তু সেখাকার ঝিলটা আর নেই। ধোলাইখাল বন্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এগুলো বন্ধ করেনি। জিয়াউর রহমান-এরশাদ এগুলো বন্ধ করেছেন। পান্থপথ খাল আর শান্তিনগর খাল বন্ধ করেছেন এরশাদ। সচিবালয়ে বৃষ্টি নামলেই দেখি হাঁটু পানি। সেই পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা আমি করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে পানি জমতো সেটাও নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করেছি। এখন আমার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ হচ্ছে যেখানেই যা হোক না কেন সেখানে জলাধার রাখতে হবে। একটা সরকার এলে সব কিছু পরিবর্তন করে ফেলে বলেই এই সমস্যা হয়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন আমি করে দিয়েছিলাম এবং জলাধার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। তার জন্য বিশেষত ভূমিখেকো যারা, যারা পত্রিকার মালিক, যারা টেলিভিশনের মালিক তারা তো এর বিরুদ্ধে বহু কিছু লিখে-টিখে আমার প্রতিমন্ত্রী মান্নান খানকে চোর বানাতো। যেহেতু আমরা ড্যাপ করলাম, তার জন্য কতরকম কথা। নিজেরা চুরি করে যে, এত বড়লোক সে নিউজ নেই।’
No comments