পতেঙ্গায় নতুন টার্মিনাল হচ্ছে
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নতুন একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছে বন্দর। নিজস্ব অর্থায়নে এই টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত টার্মিনালটির নাম ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’। ২০১৯ সালের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে এটি নির্মাণ করা গেলে জাহাজ জট কমবে বলে আশা বন্দর কর্মকর্তাদের।
বন্দর সূত্র জানায়, বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন প্রতিনিয়ত বাড়লেও গত সাড়ে নয় বছরে নতুন কোনো জেটি নির্মাণ হয়নি। জেটি সংকটে বন্দরে জাহাজ জট লেগেই আছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন এই টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার পরিবহনে যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কম সময়ে এই টার্মিনালটি নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। টার্মিনালটি যাতে দ্রুত নির্মাণ করা যায় সে জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর পর্ষদের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) যুগ্ম সচিব মো. জাফর আলম সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, গত ১৩ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন পাওয়ায় এখন টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের প্রক্রিয়াগত কাজ শুরু করা হবে।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বন্দরে বে টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল নামে তিনটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। বে টার্মিনাল স্বল্পমেয়াদে নির্মাণের সুযোগ নেই। আবার নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের আগে পুরোনো জেটি ভেঙে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ঝুঁকি রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণেও সময় লাগবে। এ জন্য স্বল্প মেয়াদে পতেঙ্গা টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুযায়ী, বন্দরের মূল জেটির ভাটির দিকে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক থেকে বোট ক্লাবের মধ্যবর্তী ২৬ একর জায়গায় এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। টার্মিনালে ৬০০ মিটার লম্বা তিনটি জেটি নির্মাণ করা হবে। এতে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা থাকবে। এর বাইরে তেল খালাসের জন্য ২২০ মিটার লম্বা একটি ডলফিন জেটিও নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে সড়কসহ নানা অবকাঠামো রয়েছে। কাস্টমস কার্যালয়ের অংশবিশেষ, রেডক্রিসেন্টের স্থাপনা, পুলিশ ফাঁড়ি ইত্যাদি সরিয়ে নেওয়া হবে। এই খাতে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত টার্মিনালে বন্দরের চেয়ে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। আবার সাগর থেকে পতেঙ্গা টার্মিনালে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য অন্তত একটি বাঁক কম অতিক্রম করতে হবে। বন্দরের মতোই সাড়ে নয় মিটার ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) এর জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে গেল অর্থবছরে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন একক কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে গড়ে প্রতি বছর ১৩ শতাংশ হারে বাড়ছে কনটেইনার পরিবহন। কনটেইনার পরিবহনের এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে বাড়তি কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ কমছে।
No comments