ভেঙে পড়েছে কুমিল্লা নগরীর রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা
কুমিল্লা মহানগরীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জলজট, যানজট আর খানা-খন্দে নাকাল হয়ে পড়েছে নগরবাসী। অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাট করে হাউজিং কোম্পানিগুলোর বহুতল ভবন নির্মাণ, সরু ও ভরাট হয়ে যাওয়া ড্রেনের কারণে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা, ড্রেন ও রাস্তার পার্শ্ব দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ ইত্যাদি কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা। ফলে এসব সড়কে নগরবাসীর স্বাভাবিক হাঁটাচলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্ত আর খানা-খন্দে ভরা নগরীর এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এক গর্ত থেকে উঠে আরেক গর্তে পড়ায় টাল সামলাতে পারছেন না চালকরা। এতে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। অটোবাইক, রিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহন উল্টে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বিকলাঙ্গও হয়েছেন অনেক যাত্রী।
নগরীর কান্দিরপাড়-রাজগঞ্জ সড়ক, মহিলা কলেজ-ইপিজেড সড়ক, রামমালা-রানীর বাজার সড়ক, টমছমব্রিজ-কুচাইতলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল-বাখরাবাদ সড়ক, বিসিক শিল্পনগরী-অশোকতলা চৌমুহনী সড়ক, মুরাদপুর-হাউজিং এস্টেট সড়ক, রানীর বাজার-বাগিচাগাঁও-পুলিশ লাইন সড়ক, সুজানগর সড়কসহ নগরীর অধিকাংশ সড়কেরই বেহাল দশা। স্থানীয়রা জানান, এসব সড়ক নগরবাসীর দুঃখ হিসেবে চিহ্নিত। তারা জানান, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বিভিন্ন সড়ক বাসা-বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে থাকে। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। এ অবস্থায় দিনের পর দিন যানবাহন চলাচলের কারণে অনেক সড়কে কূপের মতো বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। দূষিত ও ময়লা পানি আর সড়ক জুড়ে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর কোটবাড়ি থেকে চাঁপাপুর পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা একেবারে বেহাল। বিশেষ করে নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে চাঁপাপুর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের পাশে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ও পাঁচশ’ শয্যার হাসপাতাল, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি, নার্সিং ইন্সটিটিউট, সদর উপজেলা পরিষদ, বেশ কয়েকটি অভিজাত শপিংমল, কুমিল্লা ইপিজেডসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলা ও জেলার বাইরের রোগী, নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ইপিজেডের শ্রমিকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ রাতে-দিনে এ সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নগরীর উত্তর আশ্রাফপুর এলাকার ব্যবসায়ী সোহেল জানান, অনেক সময় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রী ও মালামালবাহী গাড়ি ছোট-বড় গর্তে উল্টে পড়ে সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতে দেখা যায়। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সড়ক সংস্কারের কাজ করা হলেও দলীয় পরিচয়ের ঠিকাদারদের মাধ্যমে নিম্নমানের কাজের কারণে কিছুদিন না যেতেই ইট-সুড়কি ওঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কের এ ভয়াবহ অবস্থা পরিদর্শনে জনদুর্ভোগ নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকার লোকজন।
কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নগরীর রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে মাস্টারপ্লান গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে অনেক সড়কের সংস্কার কাজ হয়েছে। তবে দুয়েকটি সড়ক সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, এগুলোর সংস্কারে এরই মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
No comments