Header Ads

Surfe.be - Banner advertising service
  • Breaking News

    এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে দিনভর ভোগান্তি গাজীপুরে


    বৃষ্টি নামলেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার বেশির ভাগজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দেশের সর্ববৃহৎ এই সিটি করপোরেশনের কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমরপানি জমে যাচ্ছে। পানি উঠছে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক-মহাসড়ক, অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নগরের সংযোগ সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পানি জমে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। এতে বাড়ছে নগরবাসী ও দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগ। পর্যাপ্ত ড্রেনের অভাবের পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক ভবন, শিল্প-কারখানা, মার্কেট ও নানা স্থাপনা গড়ে ওঠায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা নগর পরিকল্পনাবিদদের।
    সিটি মেয়র দাবি করেছেন, তাঁর অবর্তমানে গত দুই বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হয়নি। তা ছাড়া পুরনো ড্রেনগুলো পরিষ্কার ও সংস্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কয়েক দিন আগে মেয়রের চেয়ারে ফিরলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি আবারও বরখাস্ত হয়েছেন।
    বাসিন্দারা জানান, টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভারি বৃষ্টি হলেই নগরের প্রধান রাজবাড়ী সড়ক, নলজানি, চান্দনা চৌরাস্তা, আমবাগ, হরিণারচালা, ভোগড়া, বাসন, খাইলকুর, কলমেশ্বর, গাছা, কুনিয়া, তারগাছ, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, এরশাদনগর, কলেজ গেট, স্টেশন রোড, খাঁপাড়া সড়ক ও আরিচপুর এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকার রাস্তার অবস্থা এককথায় ভয়াবহ। ইটপাথর উঠে গিয়ে সড়কের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কলকারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি, স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা ও ড্রেনের বিষাক্ত পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ংকর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি মাড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিজীবী, কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ভোগড়া চৌরাস্তা ও মধ্যপাড়া, বাসন, তারগাছ, খাইলকুর, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, খাঁপাড়া সড়ক, সফিউদ্দিন রোড, সুরতরঙ্গ রোড, লেদু মোল্লা রোড, দত্তপাড়ার হিমার দীঘি রোড, জামাই বাজার, বৌবাজার ও আরিচপুর, গাজীবাড়ী, মাছিমপুরসহ টঙ্গী থানা ও সরকারি হাসপাতাল এলাকায়। এসব এলাকার রাস্তাঘাট এমনিতেই খানাখন্দে ভরা। তার ওপর ময়লা-আবর্জনা উপচে ড্রেনে পড়ায় ড্রেন বন্ধ হয়ে আছে। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় বাসাবাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে পড়ছে। দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস ও চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে টঙ্গী ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি সড়কের অবস্থা এমন। এর মধ্যে  ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এসব ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট ও খালি জায়গাগুলো যেন ভাগাড়। দুর্গন্ধে বাসাবাড়িতে টেকাও দায়।  
    টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া জানান, ভারি বৃষ্টি হলে স্টেশন রোড কোমরপানিতে তলিয়ে যায়। অনেক সময় দোকানে পানি উঠে মালামাল নষ্ট হয়। টঙ্গী হাসপাতাল ও থানার ভেতরে পানি উঠে যায়। বিশেষ করে গেটের সামনে কোমরপানি জমে হয়। আর সেই পানিতে ভাসতে থাকে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা। এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আর যেগুলো আছে তাও কয়েক বছর ধরে ভরাট হয়ে আছে। নির্বাচনের আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জলাবদ্ধতা দূর করার আশ্বাস দিলেও এখন আর তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
    আরিচপুরের বাসিন্দা হাজি মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘একসময় আরিচপুর ছিল টঙ্গীর অভিজাত এলাকাগুলোর অন্যতম। এখন এই এলাকার নাম শুনলে মানুষ নাক সিটকায়। এমনিতেই ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকায় বাস করা কঠিন; তার ওপর জলাবদ্ধতা স্থানীয়দের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। নতুন নতুন বাড়িঘর ও মহল্লার আয়তন বহু গুণ বাড়লেও সে তুলনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। আগের ড্রেনগুলো যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছিল সেখানে পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করে বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা হাঁটুপানি-কোমরপানি মাড়িয়ে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। ছড়াচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ।
    বোর্ডবাজার খাইলকুরের বাসিন্দা শ্রমিক আতিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এখানে হাজার হাজার শ্রমিক বাস করে। এলাকাটি তুলনামূলক অনেকটাই নিচু। শিল্প অধ্যুষিত হওয়ায় ধানক্ষেত ভরাট করে এখানে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। তাঁরা সারা বছরই জলাবদ্ধতায় ভোগেন। তবে বর্ষায় কষ্টের সীমা থাকে না। বৃষ্টি হলেই উত্তর ও দক্ষিণ খাইলকুর, জয়বাংলা সড়ক, গাছা ও কলমেশ্বরের অনেক এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। ময়লা পানি ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র নষ্ট হয়। কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়রা বাধ্য হয়েই নোংরা পানিতে ভিজে যাতায়াত করে। এলাকার সব রাস্তার ইটপাথর উঠে গেছে। বাসাবাড়ির ব্যবহৃত পানি ও স্যুয়ারেজ লাইনের পানি সড়কে পড়ায় সারা বছর সড়ক তলিয়ে থাকে। একই অবস্থা মোগরখাল, বটতলা, শরিফপুর ও ভোগড়া এলাকার।
    চান্দনা চৌরাস্তার বাসিন্দারা জানায়, গাজীপুরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা। অথচ সামান্য বৃষ্টিতেই চৌরাস্তা এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলে। আশপাশে কয়েকটি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মার্কেট, সড়ক ও জনপথ অফিসসহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিস রয়েছে। বৃষ্টি হলে এসব প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে। এতে ছাত্র-ছাত্রীসহ নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
    নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি নগরের একটি মাস্টারপ্ল্যান থাকে। সে অনুযায়ী আবাসিক, শিল্প ও অন্যান্য এলাকা গড়ে ওঠে। কিন্ত গাজীপুর নগর গড়ে উঠেছে চরম অপরিকল্পিতভাবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদনের ক্ষমতা নেই। নকশা অনুমোদন দেয় রাজউক। ফলে প্রভাবশালীরা ইচ্ছামতো বাসাবাড়ি, রাস্তা, মার্কেট ও কলকারখানা নির্মাণ করছে।
    করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আকবার হোসেন জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বয়স মাত্র চার বছর। এটি আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন। অনেক এলাকা আগে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ছিল। সে কারণে বাড়িঘরসহ স্থাপনা নির্মাণে নিয়ম মানা হয়নি। ওই সব এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ। তা ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে ড্রেন না থাকায় বৃষ্টি হলে সড়কের পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে ভোগড়া, বাসন, হোসেন মার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। গত তিন বছরে শিববাড়ী, লক্ষ্মীপুরা, বিআইডিসি সড়ক, ব্যাংকার্স রোড ও গ্রেটওয়াল এলাকায় বেশ কয়েকটি ড্রেন এবং প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বড় বড় রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চৌরাস্তার তেলিপাড়া ও নাওজোড় এবং টঙ্গীর বনমালায় আরো তিনটি ড্রেন নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিআরটি প্রকল্পে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ড্রেন থাকছে। এসব ড্রেন নির্মাণ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকটা কমে আসবে।
    এ ব্যাপারে গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে ড্রেন পরিষ্কার করেছিলেন। তাই বিগত সময়ে জলাবদ্ধতা ছিল না। গত প্রায় দুই বছর তিনি জেলে ছিলেন। ওই সময় নগরের কোনো ড্রেন পরিষ্কার করা হয়নি। তিনি যেসব ড্রেন নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন তা এখনো শেষ হয়নি। এসব কারণে জলাবদ্ধতা এবং রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে।

    No comments

    Post Top Ad

    Surfe.be - Banner advertising service

    Post Bottom Ad