Home
/
আইন ও বিচার
/
বিভাগ
/
সিলেট
/
৫ বছরেও শনাক্ত হয়নি অগ্নিসংযোগকারী, শেষ ভরসা বিচার বিভাগীয় তদন্ত
৫ বছরেও শনাক্ত হয়নি অগ্নিসংযোগকারী, শেষ ভরসা বিচার বিভাগীয় তদন্ত
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাস
সিলেটের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজের ‘সেমি পাকা আসাম’ কাঠামোর ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস পোড়ানোর পাঁচ বছরেও অগ্নিসংযোগকারী শনাক্ত হয়নি। আজ শনিবার এ ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। ২০১২ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যায় ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে ছাত্রবাসে আগুন দেওয়া হলে ৪২টি কক্ষ পুড়ে ভস্মীভূত হয়।
ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমসি কলেজের ছাত্র হওয়ায় ঘটনার পরপরই তাঁরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে অগ্নিসংযোগকারীদের শনাক্ত করার নির্দেশ দেন। অভিযোগ ওঠে, ছাত্রলীগ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রশিবিরকে তাড়াতেই আগুন দেয়।
অগ্নিসংযোগকারী শনাক্ত করতে পুলিশ, সিআইডির তদন্তের পর সর্বশেষ পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী পিবিআই অধিকতর তদন্ত করে। পিবিআই তদন্ত শেষে গত ৩১ মে সন্দেহভাজন অগ্নিসংযোগকারীদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরুর নির্দেশনা দেন আদালত। সিলেট মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতের বেঞ্চ সহকারীর দপ্তর সূত্র জানায়, মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরোর নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের শুরুতে গত ২০ জুন সর্বশেষ তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার জাহান সাক্ষ্য দিয়েছেন।
১৮৯২ সালে রাজা গিরিশচন্দ্র রায় তাঁর পিতামহ মুরারি চাঁদের (এমসি) নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৬০০ শতক জায়গার ওপর ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম ঘরানার স্থাপত্যরীতির সেমি পাকা ঘরের মাধ্যমে ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থাপত্যরীতির ফলে ঐতিহ্যবাহী ছিল ছাত্রাবাসটি। অবশ্য আগুনে পুড়ে যাওয়ার দুই বছরের মাথায় আগের কাঠামোয় এটি পুনর্নির্মাণ করেছে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে অগ্নিসংযোগকারী চিহ্নিত না হওয়ায় এ নিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আক্ষেপ বিরাজ করছে।
আদালতে দাখিল করা পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. বশির আহমদ ঘটনার পরপরই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার প্রথম তদন্ত করেন মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার তৎকালীন ওসি এনামুল মনোয়ার। তাঁর বদলির পর দ্বিতীয় দফায় একই থানার ওসি লিয়াকত আলী তদন্তকালে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর হয়। সিআইডির তিন কর্মকর্তার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এতেও অগ্নিসংযোগকারী শনাক্ত না হওয়ায় আদালতের নির্দেশে পিবিআই নতুন করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ঘটনার পরপরই বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও ভিডিও চিত্রের সূত্র ধরে ১১ জনকে ‘সন্ধিগ্ধ আসামি’ করা হয়েছিল। এমসি কলেজ পার্শ্ববর্তী সিলেট সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক (বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক) দেবাংশু দাস প্রথম সন্দেহভাজন এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি (পরে বরখাস্ত) পংকজ পুরকায়স্থ ছিলেন দ্বিতীয় সন্দেহভাজন। এ দুজনসহ ১১ জনকে সন্দেহভাজন আসামি থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দানের প্রার্থনা করা হইল।’
সন্দেহভাজনদের সন্দেহ করার কারণ সম্পর্কে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উক্ত আসামিরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ঘটনার সময় এমসি কলেজের আশপাশে মিছিলে অংশগ্রহণ করিতে দেখা গেছে। ঘটনাটি যেহেতু রাজনৈতিক, তাই সন্দেহ করা হইয়াছে।’ এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার জাহান বলেন, ‘আমরা তদন্তে যা পেয়েছি, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি। যে ১১ জনকে সন্দেহভাজন অগ্নিসংযোগকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা প্রমাণে কোনো কিছুই মেলেনি। তাই সন্দেহভাজনদের অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।’
অগ্নিসংযোগকারী শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতায় এখন শেষ ভরসা বিচার বিভাগীয় তদন্ত। এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম। এমসি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এ আইনজীবী সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে সাক্ষীরা নানাভাবে প্রভাবিত হতে দেখা যায়। এ কারণে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হয় না। বিচার বিভাগীয় তদন্তে এমনটি ঘটার সুযোগ থাকে না, তাই রহস্য উন্মোচনের সম্ভাবনা থাকে।
No comments