চারদিকে বুকফাটা কান্নার আওয়াজ!
কুড়িগ্রামে তিস্তার রুদ্ররূপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিতরা। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তাদের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ! পানি কমে যাওয়ার পর তীব্র স্রোতে ভেঙে যাচ্ছে আবাদি জমিসহ বসতবাড়ি।
দুই সপ্তাহের মধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বাঁধ, রাস্তা, বাজার, মসজিদ-মন্দিরসহ অনেক স্থাপনা। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেয়ায় ভাঙনকবলিতরা এখন দিশেহারা।
সোমবার সরেজমিনে তৈয়বখাঁ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভাঙনকবলিতদের আর্তনাদ! ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার সময়েই তিনটে বাড়ির ভিটা ভেঙে গেল।
টিনের ঘর সরাতে গিয়ে ফনিন্দ্রনাথ (৬৫) জানান, ২২ বছর এই ভিটায় ছিলাম। জমি ছিল, পুকুর ছিল, সুপারির বাগান ছিল। সবই এখন নদী নিয়ে গেল। এখন নিজের থাকার জায়গা নেই। পাশের গোপাল অধিকারীর কাছে এখন আশ্রয় নিয়েছি।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ মৌজাটি এখন গিলে খাচ্ছে খরস্রোতা তিস্তা নদী। চলতি মাসে আড়াইশ বসতবাড়িসহ তৈয়বখাঁ বাজার, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরসহ পুকুর, সুপারি বাগান চলে গেছে নদীগর্ভে। এখন যারা নদীর মুখে তাদের আশঙ্কা-আহাজারিতে থমকে আছে চারপাশ।
তৈয়বখাঁর সোমনারায়ণ এলাকার মালেকা (৫২) বলেন, ‘বেটাক ভাত দিবার পারি নাই। অবুঝ ছওয়াক কাম করতে ঢাকাত পাঠাইছি। এক এক করি চার ভাঙা দেইল। দেয়ার পর এক শতক মাটি কিনি বাড়ি করছি। সেও মাটি ভাঙি গেইল। যাওয়ার পর মানষের জঙ্গলে জাগা দিলে। সে জঙ্গলও ভাঙি গেইল। থাকনের কোনো জায়গা নাই। আমি সাহায্য চাই না। নদীর কাজ চাই।’
রাজারহাট বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে ৩০ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়ে পাইলিং ব্যবস্থায় কোনো কাজে আসেনি। ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে তিস্তা নদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। বড় অংকের বাজেট বরাদ্দ দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, সাময়িকভাবে ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিকভাবে বস্তা ফেলে বাঁশ দিয়ে স্পার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অতিরিক্ত আরও ১০ লাখ টাকার বরাদ্দ কাজে লাগানো হয়েছে। ভাঙনকবলিতদের রক্ষার্থে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
No comments